চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের সময় প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পলাতক শেখ হাসিনা। তার দাবি, এই বিচার শুরু থেকেই ‘পূর্বনির্ধারিত রায়ের দিকে’ এগোচ্ছিল। তবে শেখ হাসিনা ভারত থেকে দেশে ফিরে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের আগে ই-মেইলে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা দাবি করে বলেন, আমি অস্বীকার করছি না যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, কিংবা অপ্রয়োজনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর কোনো নির্দেশ আমি কখনও দিইনি।

২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট সময়ে আন্দোলন দমনে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। আগামী সোমবার এ মামলার রায়ের দিন ঠিক করা হয়েছে।

ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তার দাবি, এই বিচার শুরু থেকেই ‘পূর্বনির্ধারিত রায়ের দিকে’ এগোচ্ছিল।

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার অনুপস্থিতিতে যে বিচার চলছে, তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের’ সাজানো এক ‘প্রহসন’।

বিবিসি লিখেছে, এ রায় বাংলাদেশের জন্য যেমন ‘তাৎপর্যপূর্ণ’, তেমনি হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্রনেতৃত্বের আন্দোলনে নিহতদের স্বজনদের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের আহ্বানে গতবছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনের তদন্ত দল। গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্দেশ ও তদারকিতে’ হয়েছে।

বিভিন্ন ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া’ মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত দলের প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্র, সামরিক রাইফেল এবং শটগানের গুলিতে নিহত হন।

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব অভিযোগ তিনি ‘সুস্পষ্টভাবে’ অস্বীকার করছেন। ভারত থেকে দেশে ফিরে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রী।